নির্ধারিত রিজিক আসবেই

মুফতি আব্দুল্লাহ আল ফুআদ   

রিজিক তথা জীবিকা ও জীবনোপকরণ মানুষের জীবনধারণের অপরিহার্য একটি বিষয়। জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে রিজিকের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা মানুষ তুমুলভাবে অনুভব করে। সংসারজীবনে আর্থিক টানাপড়েন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যেকোনো সংকট পরিস্থিতিতে মানুষের প্রধানত দুশ্চিন্তা থাকে এই রিজিক নিয়ে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা এই রিজিককে ঘিরে আবর্তিত হয় প্রতিনিয়ত।

রিজিক শুধু অর্থকড়ি নয়। ঈমান-আমল, ইলম ও নেককার স্ত্রী-সন্তানসহ মানুষের সামগ্রিক জীবনের বৈধ সব উপায়-উপকরণই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু মানুষের আবশ্যকীয় এই জীবনোপকরণ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি এদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে (জীবনধারণের) সব কিছুই লিপিবদ্ধ আছে। ’ (সুরা: হুদ, আয়াত: ৬)

পূর্বনির্ধারিত ও আল্লাহর ইচ্ছাধীন এই রিজিক নিয়ে তবু মানুষ নানা হতাশায় জর্জরিত হয়। অনৈতিক ও অবৈধ পন্থায় অধিক রিজিক অন্বেষণে লালায়িত থাকে। এটা মানবিক দুর্বলতা। তবে একজন প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো, বৈধ উপায়ে আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক ও উত্তম জীবনোপকরণের ওপর সন্তুষ্ট থাকা। কারণ ব্যবসা, চাকরি ও চাষাবাদসহ দুনিয়ার বাহ্যিক উপায়-উপকরণকে রিজিক আসার মাধ্যম মনে করা হলেও কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী রিজিকের ব্যবস্থা হয় আসমান থেকে। আল্লাহ বলেন, ‘আকাশে আছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু। ’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২২)

রিজিক সমভাবে বণ্টন না হওয়ার কারণ : রিজিক বণ্টনে আল্লাহর নিজ প্রজ্ঞা ও হিকমাহ আছে। কাকে কতটুকু দেবেন এটা একান্তই তার ইচ্ছা ও মর্জি। কী পরিমাণ রিজিকে বান্দার কল্যাণ-অকল্যাণ হবে সেটা তিনিই ভালো বোঝেন।

পবিত্র কোরআনে সমভাবে রিজিক বণ্টনের বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা, সেই পরিমাণ (রিজিক) অবতীর্ণ করেন। ’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ২৭)

রিজিকের হ্রাস-বৃদ্ধি পরীক্ষাস্বরূপ : দুনিয়ায় রিজিকের প্রাচুর্যতা ও সংকীর্ণতা আল্লাহর সন্তুষ্টি কিংবা অসন্তুষ্টির প্রমাণ নয়। আল্লাহ তাঁর অপ্রিয় কোনো বান্দাকে সচ্ছল জীবনযাপনের সুযোগ দিতে পারেন, আবার কোনো প্রিয় বান্দাকে  রাখতে পারেন অভাব-অনটন ও দুঃখ-কষ্টে। বিপরীত বাস্তবতাও ঘটতে পারে। তা ছাড়া এই সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা যে কারো ক্ষেত্রে ক্ষণিক সময়ের জন্যও আসতে পারে। মূলত রিজিকের এই কম-বেশি ও উত্থান-পতন আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করার জন্য। তোমার রবের রিজিক উত্কৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। ’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৩১)

Respect of The Kalerkanthahttps://www.kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2022/05/24/1148955

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started